আমাদের বাংলাদেশে প্রচুর দেশি-বিদেশী সফটয়্যার কোম্পানি আছে। আবার অনেক স্টার্ট-আপ কোম্পানি গড়ে উঠেছে প্রতিনিয়ত। অনেক কোম্পানি থাকলেও বাংলাদেশের সফটয়্যার ইন্ডাস্ট্রি ততটা আগায় নি। ব্যাবসা বান্ধব পরিবেশ না থাকার পরও কিছু লোকাল কোম্পানি যায়ান্ট কোম্পানি হয়ে উঠেছে। আজ বলব সেরা সফটওয়্যার কোম্পানি ইন বাংলাদেশ নিয়ে। শুরুতে বলে নেই, এই ব্লগে শুধু মাত্র লোকাল কোম্পানি গুলোকে বিবেচনা করা হয়েছে। কোম্পানির কর্মী সংখ্যা, কর্মীদের স্যাটিসফিকেশন, লোকালি রেপুটেশন বিবেচনা করা হয়েছে।
১। সিলিকভি (SilicV.com):
২০২১ সালের মাঝা-মাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত সিলিকভি সফটওয়্যার কোম্পানিটি ইতিমধ্য লোকাল সেরা সফটওয়্যার কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশি সফটওয়্যার কোম্পানি গুলো নিয়ে রিসার্চ করার সময় সিলিকভি এর নাম দেখে অবাক হয়েছি। বিশেষ করে সিলিকভি এর প্রতিষ্ঠাতা ৪জন খুবই তরুন। দেশীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে লেখা-পড়া করার সময়ে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে সিলিকভি।
সিলিকভি এর মুল প্রডাক্ট হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস থিম, প্লাগিন ডেভেলপমেন্ট। প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এর বাইরে সিএমএস সংক্রান্ত সার্ভিস যেমন কাস্টম থিম ডেভেলপমেন্ট, প্লাগিন ডেভেলপমেন্ট, ইকমার্স সাইট ডেভেলপমেন্ট, বাগ ফিক্স এর সার্ভিস দিয়ে থাকে। ওয়ার্ডপ্রেস সংক্রান্ত সার্ভিস গুলো দ্রুত দেওয়ার জন্য সিলিকভি ইতিমধ্য বেশ সুনাম অর্জন করেছে।
সিলিকভি এর কালচারঃ
সিলিকভি এর কালচার নিয়ে কিছু না বললেই নয়। এখানে কর্মীদের জন্য বেশ কিছু ইউনিক সুযোগ রয়েছে যেটা অন্যান্য কোম্পানি গুলোতে নেই। সবার প্রথমে যেটা না বললেই নয়, সিলিকভি তে চাকরির জন্য আপনাকে ডিগ্রির দরকার হবে না। মানে আপনি যদি এইচএসই পাশ করতে করতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শিখে ফেলেন, তাহলে সিলিকভি তে আবেদন করতে পারবেন।
এখানে কর্মীরা ২০% সময় নিজের আইডিয়ার উপর কাজ করতে পারেন। মানে আপনার যদি কোন প্রজেক্ট আইডিয়া থাকে, সেটা কোম্পানির রিসোর্স ব্যাবহার করে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আর প্রজেক্ট সফল হলে, প্রমোশন-ইনক্রিমেন্ট তো আছেই।
এখানে সিনিয়র কর্মীরা প্রডাক্ট এর প্রফিট পেয়ে থাকে যার কারনে আপনি যত সিনিয়র হবেন, ফিন্যান্সিয়ালি আপনি তত সুবিধা পাবেন। সিলিকভি মনে করে, ব্যাবসা নয়, সমস্যা সমাধানই তাদের এক মাত্র উদ্যেশ্য। সিলিকভি এর লাইফস্টাইল নিয়ে বিস্তারিত দেখতে পারেন লাইফ এট সিলিকভি পেইজ এ।
২। জুমশেপার(joomshaper):
জুমশেপার হচ্ছে বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় সফটয়্যার কোম্পানিগুলোর একটি। অনেক ডেভেলপার-মার্কেটার এর স্বপ্নের কোম্পানিতে রুপ নিয়েছে এটি। মুলত জুমলা এবং ওয়ার্ডপ্রেস বেইজ সফটয়্যার, ওয়েব এপ্লিকেশন, থিম, প্লাগিন বানিয়ে থাকেন তারা। এখন পর্যন্ত জুমশেপার থেকে ডাউনলোড করা ওয়েবসাইট এর সংখ্যা ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি । বলা হয়ে থাকে বিশ্বের প্রথম চারটি জুমলা কোম্পানির ১টি তারা।
জুমশেপার এর সিইও কাওসার আহমেদ, ২০১০ সালে প্রথমে একাই কাজ শুরু করেন। পরে কাজ বারার সাথে সাথে প্রথমে ২ জন এবং পরে ৬জন নিয়ে প্রথম অফিশ শুরু করেন তারা। জুমলার বাইরে থিমিয়াম, থিমহান্ট, আইকোফন্ট এর প্রজেক্ট গুলো তাদের মালিকানায় পরিচালিত হয়। জুমলা, ওয়ার্ডপ্রেস সংক্রান্ত ইভেন্ট গুলোতে জুমশেপার নিয়মিত স্পন্সার করে থাকে।
ফাইভার কি সেটা জানেন তো! ফাইভার মার্কেটপ্লেস এর এ টু জেড
ফিশিং ওয়েবসাইট সতর্ক বার্তা | ফেজবুক একাউন্ট হারানোর আগে সতর্ক হন
৩। উইডেভস(weDevs):
জুমশেপার এর মতই, ইউডেভস আরেকটি জনপ্রিয় বাংলাদেশী সফটয়্যার কোম্পানি। ওয়ার্ডপ্রেস ফোকাসড হলেও, ইউডেভস এর কয়েকটি প্রডাক্ট ওয়ার্ল ওয়াইড পপুলার। দোকান নামের মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স প্লাগিন ইন্টারন্যাশনাল কয়েক মিলিয়ন ইউজার ব্যাবহার করে থাকে। ইউডেভস এর রেজিস্টারড ইউজার ৯০ হাজার এর বেশি। তাদের জনপ্রিয় প্রডাক্ট এর মধ্য ইউইয়ারপি, ইউফোরাম, হ্যাপি-এডওয়ান অন্যতম।
ইউডেভস এর প্রতিষ্টাতা, তারেক হাসান এবং নিজাম উদ্দিন কাজ শুরু করেন ২০০৮ এর দিকে । এখন তারেক হাসান কাজ কররেন উইডেভস এর সিটিও হিসাবে এবং নিজাম উদ্দিন কাজ করেন সিইও হিসাবে। ইউডেভসও নিয়মিত বিভিন্ন ইভেন্ট এ স্পন্সার করে থাকে। বাংলাদেশি ডেভেলপার এবং ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও, মার্কেটার, কন্টেন্ট রাইটার এর স্বপ্নের কোম্পানি ইউডেভস।
৪। ব্রেইনস্টেশন২৩(Brain Station 23):
২০০৬ সালে, বুয়েট থেকে পাশ করে, বিশাল স্বপ্ন নিয়ে রাইসুল কবির শুরু করেন ব্রেইনস্টেশন২৩ যেটা কিনা বাংলাদেশের প্রথম কাতারের কোম্পানিতে রুপ নিয়েছে এখন। এই কোম্পানিতে কর্মীদের পারিশ্রমিক, কর্ম পরিবেশ আর সিকিউরিটি সমসাময়িক অন্য কোম্পানি থেকে অনেক ভাল। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট কে টার্গেট করে কাজ করা ব্রেইনস্টেশন এর কর্মী সংখ্যা ৩০০ এর বেশী এবং নিয়মিত নতুন কর্মী হায়ার করে থাকে।
প্রতিষ্টার পর থেকেই এই কোম্পানি নিয়মিত বেসিস এর বিভিন্ন পুরস্কার পেয়ে থাকে। কোম্পানির সার্ভিস হচ্ছে মুল ধারার টেকনোলজি নিয়ে যেমন ব্যাংকিং সলুশন, এপ ডেভেলপমেন্ট, এইম ডেভেলপমেন্ট, এআই-এমএল, ক্লাউড, এআর/ভিআর, ইকমার্স এর সার্ভিস দিয়ে থাকে। শুরুতে শুধু ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্ট এর জন্য সার্ভিস দিলেও, ব্রেইনস্টেশন এখন লোকালি কিছু সার্ভিস শুরু করেছে।
৫। টেক কেয়ার(Tech Care):
টেক কেয়ার হচ্ছে বাংলাদেশী এওয়ার্ড উইনিং সফটয়্যার কোম্পানি। নতুন কিন্তু এমিউজিং অনেক আইডিয়া নিয়ে, ইতিমধ্য টেক কেয়ার লোকাল যায়ান্ট হওয়ার রাস্তায়। মুলত ওয়েব এবং মোবাইল এপ ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এর সার্ভিস দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ এবং ইন্টারন্যাশনাল অনেক গুল যায়ান্ট এপস টেক কেয়ার এর বানানো। সুলেহীন সাগর, রুয়েট থেকে পাশ করে ২০১২ এর দিকে এই কোম্পানি শুরু করেন এবং বর্তমানে তিনিই সিইও হিসাবে কর্মরত আছেন। কর্মী সংখাতে অনেক বড় না হলেও, কাজের পরিবেশ, পারিশ্রমীক, জব সিকিউরিটি, লার্নিং এনভারনমেন্ট এ এই কোম্পানি অনেক এগিয়ে গেছেন!
৬। ডায়ান্ট্রি(Daintre Inc):
বাংলাদেশি আরেকটি অন্যতম যায়ান্ট কোম্পানি হচ্ছে ডায়ান্ট্রি। এই কোম্পানি ওয়ার্লড ওয়াইড মোবাইল এবং ওয়েব এপ, এমএল, ডেটা এনালাইসিস এর সার্ভিস গুলো প্রভাইড করে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্ট বেশী থাকায় এবং বৈশ্বিক মার্কেট টার্গেট কোড়ে কাজ কোড়ায়, লোকালি তেমন পরিচিত নয় তারা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯ সালে শুরু করে এরই মধ্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। বাংলাদেশে সার্ভিস না দিলেও, বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে দারুন প্রিয় হচ্ছে এই কোম্পানি। মুলত কোম্পানির পলিসি, লার্নিং এনভার্নমেন্ট এর কারনে তারা জনপ্রিয় হয়েছে।
এই কোম্পানিতে কর্মীরা সপ্তাহে ১দিন শর্তসাপেক্ষে নিজের আইডিয়ার উপর কাজ করতে পারে যেটা সমসাময়িক অন্য কোম্পানিতে কল্পনাও করা যায় না। ডায়ান্ট্রির কর্মীদের কে এসেট মনে করে থাকে। এই কোম্পানির শতভাগ কর্মী বাংলাদেশি এবং এখান কার রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট টিম ওয়ার্ল্ড এর অন্যতম সেরা গবেশনা টিম। বিদেশী এবং বাংলাদেশী নানান ইভেন্ট এ ডায়ান্ট্রি নিয়মিত স্পনসার করে থাকে।
৭। সাউথটেক(South Tech):
বাংলাদেশ থেকে যে সব সফটয়্যার কোম্পানি লিড করছে এবং বাংলাদেশ কে প্রেজেন্ট করছে তাদের মধ্য সাউথটেক অন্যতম। সফটওয়্যার কোম্পানি ইন বাংলাদেশ এর মুল ধারার সফটয়্যার ডেভেলেমেন্ট যেমন ইআরপি, ভ্যাট সলুশন, এইচআর, পস, ম্যানেজমেন্ট সফটয়্যার এর মাধ্যমে সাউথটেক দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছে! ৮০এর বেশী ক্লায়েন্ট এর বাইরে, ডেভেলপার এর কাছেও এই কোম্পানি দারুন জনপ্রিয়। ১৯৯৬ সালে সুরু হওয়া এই সফটয়্যার কোম্পআনির মুল লক্ষ্য হচ্ছে বেস্ট সফটয়্যার এবং আইসিটি সার্ভিস দেয়া। ২৪০ জনের বেশী কর্মীর এই অফিসের সার্ভিস এতই ভালো যে ৯৫ ভাগ ক্লায়েন্ট তাদের কাজে সন্তুস্ট হয়ে রিপিট কাজ করিয়েছেন। সাইথটেক বাংলাদেশের অন্যতম, আইএসও ৯০০১:২০০৮ সার্টিফাইড এবং সিএমএমআই লেভেল-৩ অ্যাপ্রেইজড কোম্পানিটি । সাউথটেক হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এন্টারপ্রাইজ সলুশ্যন স্পেস যার গ্রাহক এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কতৃপক্ষ, ব্র্যাক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইসিডিডিয়ারবি ইত্যাদি।
৮। থিম-এক্সপার্ট(ThemeXpert):
জুমলা কেন্দ্রীক আরেকটি জনপ্রিয় কোম্পানি হচ্ছে থিম-এক্সপার্ট! জুমলা ডেভেলপমেন্ট, এক্সটেনশন, ওয়েব এপলিকেশন এর জন্য ইতিমধ্য এই কোম্পানি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পারভেজ আহমেদ এর পরিচালনায়, ছোট্ট একটি টিম নিয়ে তারা এত ভালো কাজ করে যাচ্ছেন যেটা তাদের জনপ্রিয়তা দেখলে বুঝা যায়। কোম্পানির সিইও পারভেজ আহমেদ, ইউনিভার্সিটি ড্রপট, বিদেশের ভার্সিটি তে পড়ার অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু উদ্যোক্তা হিসাবে ইতিমধ্য বেশ সফল বলাই যায়। ওয়ার্ডপ্রেস ফোকাসড হলেও এই কোম্পানি ওয়েব ইউআই এবং ওয়ার্ডপ্রেস নিয়েও কাজ করে থাকে।
তিনটি বিষয় না জেনে কখনই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন না
ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ১০০০/মাস ডলার ইনকাম করুন
বাংলাদেশ এ অনেক জনপ্রিয় কোম্পানি আছে, অনেক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ব্রাঞ্চ আছে। এই আর্টিকেল এ তাদের কে এভয়েড করা হয়েছে। শুধু মাত্র যে সব কোম্পানির কাজের পরিবেশ, মান্থলি স্যালারি, লার্নিং অপারচুনিটি অনেক বেশী তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। তাই, অনেক নাম জানা কোম্পানির নাম এখানে দেয়া হয় নি। সেরা সফটওয়্যার কোম্পানি ইন বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য যে সব ভালো কোম্পানি আছে তাদের নাম কমেন্টে জানাতে পারেন।
Thank you for your excellent content. Well done dear.
Thank you for reading our blog TechAlert and make valuable comments. We love to see your regular comments on the blog and invite you to read the other blogs as well.
Make a list of top multinational software companies in Bangladesh.
আমাদের ইচ্ছা আছে এমন একটা লিষ্ট করার জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে, কমেন্ট করার জন্য।